সারাবেলা প্রতিবেদক :
প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৭ বুধবার, ০৯:৫৪ পিএম
বাংলাদেশ! একটু একটু হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে। চলতে গিয়ে কখনো হোঁচট খেয়েছে আবার দৃঢ় প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আর এর পেছনে যার সবচেয়ে বড় অবদান তিনি আর কেউ নন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে বিশ্বে বাংলাদেশ এক অনন্য নাম।
আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-নিপীড়ন, হত্যাপ্রচেষ্টাসহ বহু বাধা-বিঘ্ন পেরিয়ে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। দেশের প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতার সঙ্গে তার দক্ষতা ফুটিয়ে তুলেছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হয় ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভা। এতে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত ও প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাকে স্থান দেওয়া হয়নি। তরুণ কয়েকজন নেতা যুক্ত করা হয় মন্ত্রিসভায়। প্রশাসনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সক্ষম এই নেত্রী। আর প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তাঁর অবাধ বিচরণ অবশ্যই প্রসংশনীয়।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর শেখ হাসিনার জনগণের কাছে প্রথম অঙ্গীকার ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। যেই কথা সেই কাজ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে না না দ্বিমত থাকলেও তিনি জনগণকে দেওয়া কথা রেখেছেন। বিচার বিভাগকে করেছেন গতিশীল। তাঁর সময়ে কুখ্যাত রাজাকারদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর থেকে বড় অবদান আর কি হতে পারে? দেশেকে কলঙ্কমুক্ত করতে তাঁর প্রচেষ্টার ঘাটতি ছিল না কখনোই।
শেখ হাসিনার অর্জনগুলোর মূল্যায়ন তালিকায় সবার প্রথম হলো সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। দেশে গণতন্ত্র যখন মৃতপ্রায় তখন তা ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি। আর এ লড়াইয়ে জয় নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের একটি বড় সাফল্য, ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই দেশব্যাপী বিডিআর বিদ্রোহকে ধৈর্য ও সাহসিতার সঙ্গে মোকাবিলা করে এর অবসান ঘটানো। এই আকস্মিক বিদ্রোহ সরকারকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়েছিলো। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার মধ্যেও অগ্রগতি হয়েছে দেশের। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সূচকের উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে, জিডিপির সূচকও ঊর্ধ্বমুখী। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থে দেশে রেমিট্যান্স বাড়ছে।
নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও মেট্রোরেলের কাজ শুরুসহ একাধিক বিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনা। যেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে না না বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো তা থেকে বেরিয়ে আসতে শেখ হাসিনার বিচক্ষণতারই প্রকাশ।
মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত মামলার রায়কে সরকারের প্রথম বছরের অন্যতম সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। প্রথম বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্যের মধ্যে ছিল প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থির রাখা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান সরকারের আরেক বড় সাফল্য হলো ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত চুক্তি। ৬৮ বছরের বঞ্চনা আর ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবে রূপ পায় ৭ মে ভারতের পার্লামেন্টে বিল পাশ হওয়ার মধ্য দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সীমান্তে ’ছিটমহল’ শব্দটির আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তি ঘটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের বড় ধরনের কূটনৈতিক সফলতাও এটি।
২০১৬ সালে জঙ্গিবাদ কঠোরভাবে দমন করে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করে বাংলাদেশ। ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা, শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠের হামলা দেশি-বিদেশি চাপ বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগ সরকারের উপর। পুলিশের নবনির্মিত কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের ধারাবাহিক সাফল্যে জঙ্গিবাদ এখন নিয়ন্ত্রণে।
গত তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক তৎপরতায় একে একে ঢাকা সফর করেছেন হেভিওয়েট বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান-নেতারা। ঐতিহাসিক সফরে এসেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান এক নতুন মাইলফলক।
এছাড়া তিনি তার গঙ্গা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় অভূতপূর্ব সাফল্য, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ আরো কতো কিছুতেই সাফল্য দেখিয়েছেন শেখা হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর নানামুখী দক্ষতা দিয়ে ইতোমধ্যেই নিজেকে বলিষ্ঠ ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়ে দেশকে করেছেন সম্মানিত। ২০১৬ সালে তিনি পেয়েছেন ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয় ‘ এবং ‘এজেন্ট অব চেইঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’।
২০১৫ তে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নেতৃত্বের অবদানের জন্য জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনপি) সর্বোচ্চ পরিবেশবিষয়ক সম্মান ’চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ এবং ’ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) আইসিটি টেকসই উন্নয়ন’ পুরস্কার অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশীল গড়ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান অবশ্যই চোখে পড়ার মতোন। সারাবিশ্ব আজ তার সাফল্যের জয়গান গাইছে।