আজাদ মঈনুদ্দীন
প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২০ শুক্রবার, ০৯:১৭ এএম
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজালকে যারা চেনেন, জানেন তারাই বলতে পারবেন সুন্নিয়তের জন্য কতটা অকুতোভয় ছিলেন মানুষটি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্রোতের প্রতিকূলে একাই লড়েছেন। যা বলা দরকার, যা করা দরকার-করেছেন সাহসের সঙ্গে। তাঁর লড়াই ছিল ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবির ও তাদের সহোদর চক্রের বিরুদ্ধে।
২০০৯ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ সামীম মোহাম্মদ আফজাল। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আমূল বদলে ফেলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে। যে প্রতিষ্ঠানটি আগে মানুস চিনতই না, সেটি নিয়ে গেছেন মানুষের দুয়ারে। ফোরকানিয়া কার্যক্রম, গণশিক্ষা, পাঠাগার ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশজুড়ে বিস্তৃত করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম।
দায়িত্ব নেওয়ার পরই বায়তুল মোকাররমের অস্থিতিশীল পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখেন । হেফাজতে ইসলাম যখন লংমার্চের ডাক, সভা সমাবেশে উস্কানির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমমনা আলেম ওলামাদের নিয়ে তিনি আওয়ামী লীগে সরকারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্ম তৈরিতে জোরালো ভূমিকা রাখেন। তাঁর সেই সাহসী ভূমিকার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার পুরস্কৃতও করেছেন।
সামীম আফজাল শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বলে বায়তুল মোকারম মসজিদ সুন্নিপন্থি খতিব পেয়েছিল। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে এখনও উচ্চ আওয়াজে মহানবীর (দ.) সালাত-সালাম, মিলাদ-কেয়াম হয়। সারাদেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যানারে সুন্নিয়তের শক্ত খুঁটি তৈরি হয়েছে। মসজিদে মসজিদে মিলাদ-কেয়াম ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সর্বত্র আজিমুশশান মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল হচ্ছে। সুন্নিযতের জন্য এমন নি:স্বার্থ অবদানের মানুষ আর ক‘জনই আছেন।
স্রোতের প্রতিকূলে হাঁটতে গিয়ে অপবাদও এসেছে অনেক। এর সবগুলোর নেপথ্যে ছিল জামায়াত ও তাদের সহযোগী সহোদররা। সামীম আফজাল ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি টিনশেড ঘরে থাকতেন। সল্প দামের পাঞ্জামী-পায়জামা ছিল তার সারাজীবনের পোশাক। কখনোই তিনি বিত্ত বৈভবের পথে হাঁটেন নি। চট্টগ্রামে নারী শিশু আদালত ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক থাকাকালীন সমযেও তার ইঞ্চি মাপা সততার কথা অনেকে জানেন।
শত অপবাদের পর সামীম আফজালকে এতটুকু টলানো যায়নি। পুরস্কার হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দফায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক পদে তাঁর মেয়াদকাল বাড়িয়ে শেষ দিন পর্যন্ত দাযিত্বে রেখেছেন।
বড় অসময়ে চলে গেলেন সুন্নিয়তের এই সাহসী সৈনিক। সুন্নিয়তের জন্য আরো অনেক কিছু করার ছিল এই বীরযোদ্ধার। স্যালুট জনাব সামীম আফজাল। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে কত মহাপরিচালক এসেছেন, গিযেছেন। কযজনকে মানুষ চিনে, মনে রেখেছে ! কর্মগুণে আপনি একটি প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরেছেন। আপনার কাজ, অবদান মানুষ স্মরণ রাখবে। আপনি থাকবেন লক্ষ-কোটি মানুষের হৃদয়ে।
জানাযা সম্পন্ন
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টা ২০ মিনিটে রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
সামীম মোহাম্মদ আফজালের প্রথম জানাজা শুক্রবার (২৫ জুন) ফজর নামাজের পর রাজধানীর শ্যামলীর জহুরি মহল্লায়, এরপর দ্বিতীয় জানাজা নারিন্দা মশুরিখোলা দরবার শরিফে অনুষ্ঠিত হয়। পরে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তালশহরে জুমার নামাজের পর দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, সামীম আফজাল ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে আসীন ছিলেন। এর আগে তিনি সরকারি নানা দায়িত্ব পালন করেন।
শোকবার্তা
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি। মন্ত্রী আজ এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
সামীম মোহাম্মদ আফজালের মৃত্যুতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ শোক প্রকাশ করেছেন। তিনিও তার পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
বেতাগী আস্তানা শরীফের সাজ্জাদানশীন মাওলানা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ অনুরূপ এক বিবৃতিতে গভীর শোক ও শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।